আইনে বিধান রয়েছে, একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে সর্বোচ্চ ১৫টি মোবাইল ফোনের সিমকার্ড নিবন্ধন করা যাবে। তবে কোনো কোনো এনআইডির বিপরীতে বেশি সিমকার্ড আছে সেটা খুঁজতে গিয়ে এক বিস্ময়কর তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
একটি এনআইডি নম্বর দিয়ে ৪২ হাজার সিম নিবন্ধন করা হয়েছে! কি কারণে ওই গ্রাহক এটা করেছেন সে ব্যাপারে গোয়েন্দাদের খোঁজ নিতে বলেছে বিটিআরসি। যদিও নিরাপত্তার স্বার্থে সেই গ্রাহকের পরিচয় প্রকাশ করেনি সংস্থাটি।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, একটি এনআইডির বিপরীতে ১৫টির বেশি সিম আছে বর্তমানে ২৬ লাখ ৩০ হাজার। গত ৩ এপ্রিল সবগুলো মোবাইল ফোন অপারেটরকে চিঠি দিয়ে সর্বশেষ কেনা ১৫টি নম্বর রেখে বাকিগুলো বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিটিআরসি।
তার আগে যাদের নামে বেশি সিম আছে তাদের কাছে মেসেজ পাঠিয়ে কোন ১৫টি নম্বর রাখতে চান সেটা জানাতে অনুরোধ করতে হবে। তবে ২৬ এপ্রিলের পর কোনো গ্রাহক আর অতিরিক্ত সিম রাখতে পারবেন না। অন্যগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।
এদিকে ভুয়া সিম নিবন্ধনের দায় এখন থেকে মোবাইল ফোন অপারেটরকেই নিতে হবে। প্রতিটি ভুয়া সিমের জন্য তাদের পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের পরও মোবাইল ফোন ব্যবহার করে হুমকি, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, নারীদের উত্ত্যক্ত করা থেমে নেই। অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধীরা ভুয়া নিবন্ধিত সিম কিনে এসব অপরাধ করছে। ফলে এখন থেকে এর পুরো দায় অপারেটরের।
এ প্রসঙ্গে বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, ‘যেখানে আইন রয়েছে একটি এনআইডি দিয়ে গ্রাহক ১৫টি সিম রাখতে পারবেন, সেখানে বেশি সিম থাকা তো অপরাধ! তাই আমরা অতিরিক্ত সিমগুলো ২৬ এপ্রিলের পর বন্ধ করে দেব।
গ্রাহক সর্বশেষ যে ১৫টি সিম কিনেছেন সেগুলো চালু থাকবে, আগেরগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এর আগে অপারেটর আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তখন কাস্টমার সেন্টারে গিয়ে পছন্দের সিমকার্ডগুলো রেখে বাকিগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে সিম নিবন্ধন এবং বায়োমেট্টিক ভেরিফিকেশন করা হলে একটি পরিচয়পত্রের বিপরীতে কতটি সিম থাকতে পারে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। নিবন্ধন এবং বায়োমেট্টিক ভেরিফিকেশন শেষে সেই সংখ্যা ১৫টি বেঁধে দেওয়া হয়।
পরে দেখা যায়, একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে ১৫টির ওপরে নিবন্ধন করা সিমের সংখ্যা ৩০ লাখ পেরিয়ে গেছে। তখন গ্রাহকদের বাছাই করে সিম সংখ্যা নামিয়ে আনার কথা বলা হলে তিন লাখের কিছু বেশি সিম বন্ধ করে অপারেটরগুলো। এখন বিটিআরসি ‘সেন্ট্রাল বায়োমেট্টিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম’ তৈরি করেছে।
যেখানে সবগুলো অপারেটর যুক্ত আছে। ফলে সহজেই জানা যাচ্ছে অতিরিক্ত সিম কত। কোনো গ্রাহক চাইলে নিজেই মোবাইল ফোন থেকে *১৬০০১# ডায়াল করে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের শেষ চার ডিজিট সেন্ড করলেই জেনে নিতে পাররেন তার নামে নিবন্ধিত সিমের সংখ্যা কত।
এর আগে গত পহেলা এপ্রিল বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগ থেকে অপারেটরগুলোর কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, প্রতিটি সিম নিবন্ধন নিশ্চিত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট অপারেটরের। এর আগে কেবল অনিবন্ধিত সিম ধরা পড়লে প্রতিটির ক্ষেত্রে ৫০ ডলার হারে জরিমানা গুনতে হতো। এটাকে সুযোগ হিসেবে নেয় অপারেটররা।
এখন বিষয়টি পরিষ্কার করে চিঠিতে বলা হয়েছে, মিথ্যা বা ভুল তথ্য দিয়ে কোনো সিম রেজিস্ট্রেশন হলে তার দায়-দায়িত্ব অপারেটরের। এজন্য তাদের ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হবে।
0 comments: