Wednesday, April 3, 2019

অনুমোদনের একটি ফটোকপি ছাড়া আর কিছুই দেখাতে পারেননি রূপায়ণ


রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারের অনিয়মের বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) তদন্ত কমিটি যেসব তথ্য জানতে চেয়েছে সেগুলোর উত্তর দিতে পারেনি রূপায়ণ গ্রুপ। তদন্ত কমিটি তাদের কাছে ২৩ তলা বানানোর নকশা আছে কিনা,সংশোধিত নকশা অনুমোদনের জন্য রাজউকে আবেদন করা হয়েছে কিনাসহ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জানতে চান। তবে এর উত্তরে কেবলমাত্র অনুমোদনের একটি ফটোকপি ছাড়া আর কিছুই দেখাতে পারেননি রূপায়ণ কর্মকর্তারা। ওই ফটোকপিতে অনুমোদনের যে তথ্য আছে তা নিয়েও সংশয় আছে রাজউকের। সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছে। গত ৩১ মার্চ রাজউকের তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হয়েছিলেন রূপায়ণ কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৩১ মার্চ কমিটি তদন্তের স্বার্থে রূপায়নের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডেকে বেশ কিছু তথ্য জানতে চান। এর মধ্যে ভবনটির ২৩ তলা অনুমোদনের মূল নকশা আছে কিনা; সংশোধিত নকশা অনুমোদনের জন্য রাজউকে আবেদন করা হয়েছে কিনা; আবেদন করলে তার রিসিভ কপি আছে কিনা; অনুমোদনের জন্য সরকার নির্ধারিত যে ফি পরিশোধ করতে হয় তা করা হয়েছে কিনা; করে থাকলে কোন ব্যাংক বা ব্যাংক রেজিস্টারে সে তথ্য আছে কিনা কিংবা তার কোনও রশিদ আছে কিনা; রিভাইস প্ল্যান অনুমোদনের জন্য যেসব সংস্থার ছাড়পত্র প্রয়োজন তা আছে কিনা; বনানীতে সিভিল এভিয়েশনের ২৩ তলার ভবন নির্মাণের অনুমতি আছে কিনা; তাদের কাছে (রূপায়ণ) এসব বিষয়ের প্রমাণপত্র না থাকলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেই ছাড়পত্রের পক্ষে কোনও নথি আছে কিনা। এসব প্রশ্নে জবাবে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা কোনও উত্তর দিতে পারেননি। তারা এক কথা জানিয়েছেন, শুধু অনুমোদনের একটি ফটোকপি ছাড়া তাদের কাছে কোনও কিছুই নেই।

রাজউকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান,১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ১৮ তলা ভবন অনুমোদনের জন্য এফ আর টাওয়ারের নকশায় অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু ভবন মালিক ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আমাদের কাছে আরও একটি নকশা পেশ করেন। সংশোধন করে এটিকেই মূল নকশা হিসেবে দাবি করেন তারা। অথচ রাজউকে যে নকশা সংরক্ষিত আছে তার সঙ্গে সেটির মিল নেই। পরে সেই ঘটনায় ২০০৭ সালের দিকে তদন্ত করা হয়। তদন্তেও দেখা যায়, ভবনটি মূল নকশার ব্যত্যয় ও বিচ্যুতি ঘটিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।

অপরদিকে, ডেভেলপার কোম্পানির একটি নথিতে দেখা গেছে, ২০০৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লিয়াকত আলী খান মুকুলের অনুকূলে ভবনটির নকশা অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়। পরের বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজউকের ৪৪তম বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন (বিসি) কমিটি ৮ দশমিক ৮ কাঠা জমির ওপর বাণিজ্যিকভাবে দুটি বেজমেন্ট ও ২৩ তলা ইমারত নির্মাণের অনুমোদন দেয়। অনুমোদন পাওয়ার পর রাজউকের তৎকালীন অথরাইজড অফিসার বদিউজ্জামান একই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি দুটি বেজমেন্ট ও ২৩ তলা ইমারত নির্মাণের অনুমোদনের নথিতে স্বাক্ষর করেন। পরের দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি অনুমোদনের চিঠিটি ইস্যু করেন। তবে রূপায়ণের এই পত্রটি নিয়ে সন্দেহ আছে রাজউকের। এটিকে আমলে নিয়েই সংস্থাটি তদন্ত শুরু করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সূত্রটি জানিয়েছে,তদন্ত কমিটি রূপায়ণের কর্মকর্তাদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেছে। আগামী রবিবার রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে সেই প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হবে। এরপর কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে রাজউক।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বুধবার দুপুরে রাজউক চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এফ আর টাওয়ারে দুর্ঘটনার পর আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটি তাদেরকে ডেকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আগামী রবিবার কমিটি আমার কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবে।

এফ আর টাওয়ারের কোনও নকশা পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আমাদের কাছে ১৮ তলার একটা নকশা আছে। কিন্তু ২৩ তলা নকশার একটা কাগজ আমি দেখেছি- সেটার কোনও সত্যতা নেই। আমি বলছি, আমার বা রাজউকে যে ফাইল রয়েছে সেখানে আমি এটা পাইনি। এখন কমিটি তদন্ত করছে। তাদের তদন্তে বিষয়টি বেরিয়ে আসবে।

তবে বিষয়টি নিয়ে রূপায়ণ গ্রুপের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) সাইফুল ইসলমকে ফোন করলেও তিনি ধরেননি।

ভবনটির ভূমি মালিক এসএমএইচ আই ফারুকের ম্যানেজার কামাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রথমে স্যার (ফারুক) ১৮ তলা ভবন নির্মাণের জন্য রূপায়ণের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। তাতে ভূমি মালিকের ৪৫ ভাগ ও ভবন মালিকের ৫৫ ভাগ নির্ধারণ করা হয়। পরে রূপায়ণ ২৩ তলা করার জন্য স্যারকে একটি প্রস্তাব দেন। কিন্তু স্যার সেই প্রস্তাবপত্রে স্বাক্ষর করেননি। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, রাজউক থেকে যদি সঠিক নিয়মে অনুমোদন পাওয়া যায় তাহলে তিনি রাজি আছেন। কিন্তু তারা (ডেভেলপার) প্রপার ওয়েতে (সঠিক নিয়মে) রাজি হয়নি। ভূমি মালিকের অনুমোদন ছাড়াই তারা বাকি ভবন নির্মাণ করেছে। এই অনিয়মের বিষয়গুলো স্যার রাজউককেও একাধিক চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন।
Previous Post
Next Post

post written by:

0 comments: