Friday, March 8, 2019

প্রত্যেক জুমায় জান্নাতে বাজার বসে!



জান্নাতের অবস্থা কেমন হবে, জান্নাতের নেয়ামতরাজির বৈশিষ্ট্য কী এটা সকল মু‘মিন মুসলমানের জানা উচিত। যাতে করে এসব জেনে সেগুলো পাওয়ার জন্য বেশী বেশী আমল করতে পারে।

মানুষের অন্তরে যত কল্পনা হয়, চিন্তার যতটুকু শক্তি ও উদারতা রয়েছে, অন্তরের যত ব্যাপ্তি রয়েছে এগুলোর থেকে হাজারও কোটি বেশী বড় আল্লাহর নেয়ামত। কুরআন ও হাদীসে শুধু সামগ্রিক চিত্র বর্ণনা করা হয়েছে।পৃথিবীর বাজারের মত জান্নাতের বাজার নয়। পৃথিবীর বাজারগুলোর চেয়ে জান্নাতের বাজারের নিয়ম-নীতি ভিন্ন। সেখানের কোন ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড থাকবে না। সেখানে ক্রয়-বিক্রয় থাকবে না।

আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, প্রত্যেক জুমায় জান্নাতি লোকেরা জান্নাতের বাজাররে একত্রিত হবেন। তারপর উত্তরদিকের মৃদুবায়ু প্রবাহিত হয়ে সেখানকার ধূলা-বালি তাদের মুখমণ্ডল ও পোশাক-পরিচ্ছদে গিয়ে লাগবে। এতে তাদের সৌন্দর্য এবং শরীরের রং আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
তারপর তারা ফিরে আসবে নিজেদের পরিবারের কাছে। এসে দেখবে, পরিবারের লোকদের শরীরের রং এবং সৌন্দর্যও বহুগুণ বেড়ে গেছে। পরিবারের লোকেরা তাদের বলবে, আল্লাহর শপথ!

আমাদের কাছ থেকে যাবার পর তোমাদের সৌন্দর্য বেড়ে গেছে। উত্তরে তারাও বলবে, আল্লাহর শপথ! তোমাদের শরীরের সৌন্দর্যও তোমাদের নিকট থেকে আমরা যাবার পর বহুগুণে বেড়ে গেছে। (মুসলিম, হাদিস নং: ২৮৩৩, ১৮৮৯)

আলী (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, জান্নাতে একটি বাজার রয়েছে। সেখানে যখনই কোনো ব্যক্তির যে ধরনের মুখাবয়ব (ও প্রতিকৃতি) ধারণ করতে চাইবে, সঙ্গে সঙ্গে সে সেই আকৃতি ধারণ করতে পারবে। (মিশকাত, হাদিস নং: ৫৬৪৬, ১৯৮২; তিরমিজি, হাদিস নং: ২৫৫০)

সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব (রহ.) থেকে বর্ণিত রয়েছে। তিনি একদিন আবু হুরায়রা (রা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, আল্লাহুর কাছে দোয়া করি যেন তিনি আমাকে এবং তোমাকে জান্নাতের বাজারে একত্রিত করেন।


সাঈদ ইবুনল মুসাইয়াব তখন বললেন, জান্নাতে কি বাজারও থাকবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ, রাসুল (সা.) আমাকে জানিয়েছেন যে, জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশ করার পর নিজ নিজ আমলের আধিক্য অনুসারে যথাযোগ্য বাসস্থান গ্রহণ করবে। পরে দুনিয়ার দিন হিসাবে প্রতি জুমাবার তারা তাদের মালিকের (আল্লাহ তাআলা) সাক্ষাতে আসবে। তাদের জন্য তার আরশ প্রকাশ করা হবে।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কি আমাদের প্রতিপালকের দর্শন পাব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সূর্য বা পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে কি তোমাদের কোনো অসুবিধা হয়? আমরা বললাম, না।
তিনি বললেন, তেমনিভাবে তোমাদের প্রতিপালকের সাক্ষাতেও কোনো অসুবিধা থাকবে না। ওই মজলিসে এমন কোনো ব্যক্তি অবশিষ্ট থাকবে না, যার সঙ্গে আল্লাহ তা’আলার কথোপকথন না হবে।


সেখান থেকে জান্নাতিরা জান্নাতের বাজারে আসবে। ফেরেশতারা তা ঘিরে রাখবেন। তাতে এমন সব জিনিস থাকবে, যা কোনো চোখ কখনও দেখেনি, কোনো কান কোনো দিন শোনেনি, কোনো হৃদয়ে তা কল্পনাও হয়নি। সেখানে কিছুর কেনাবেচা হবে না। এই বাজারেই জান্নাতিদের পরস্পর সাক্ষাৎ হবে।

জান্নাতিরা নিজ নিজ আবাসে ফিরে আসার পর স্ত্রীরা এসে অভ্যর্থনা জানাবে। বলবে, স্বাগতম ও শুভেচ্ছা। আমাদের নিকট থেকে যখন গিয়েছিলেন, তখনকার তুলনায় এখন আপনারা আরো বেশি সুন্দর হয়ে ফিরে এসেছেন। তখন জান্নাতি পুরুষরা বলবে, আমরা তো আজ মহাপরাক্রমশালী আমাদের প্রভুর মজলিসে বসে এসেছি। (হাদিসটির অনুবাদ সংক্ষেপে এবং বর্ণনাভঙ্গি বদল করা হয়েছে।) (তিরমিজি, হাদিস নং: ২৫৪৯; ইবনু মাজাহ, হাদিস নং: ৪৩৩৬)
Previous Post
Next Post

post written by:

0 comments: